রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২০২২
| রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২০২২ |
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২০২২-রোমান্টিক প্রেম কাহিনী গুলো পড়লে অনেক ভালো লাগবে অনেক রোমান্টিক রোমান্টিক কথা এই গল্পটি আসলেই অনেক রোমান্টিক হয়েছে আপনাদের কাছে যদি রোমান্টিক লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আকাশ জুড়ে শ্রাবণের কালো মেঘ ছেয়ে আছে।আমার সামনের দিকে চুল গুলা বেশ বড়।একটু পর পর দমকা বাতাসে আমার সামনের চুল গুলা উড়ছে।মনে হচ্ছে খুব জোড় বৃষ্টি হবে।আবার ঝড়ের আভাস বেশ ভালো মতোই টের পাচ্ছি আমি।কিছু একটা ভাবতে ইচ্ছা করছে আমার। কিন্তু মাথা একদম ফাকা ফাকা মনে হচ্ছে।
এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।তবুও অন্যমনস্ক হয়ে
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমি।আকাশে মেঘের গর্জন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।মূহুর্তের মধ্যেই আমার সমস্ত শরীর ভিজিয়ে দিলো শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টি।
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।আমার কাঁধে হাত দিতেই আমি খানিকটা চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিলাম।চোখ মেলে দেখি আমার সামনে পুষ্পিতা দাঁড়িয়ে।বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম পুষ্পিতার দিকে।
পুস্পিতা আমার কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ছাদের রেলিংটা ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
বৃষ্টির গতি খানিকটা কমে গেলে আমি বাসার ভিতরে চলে গেলাম।আমার পিছুপিছু পুষ্পিতাও ছাদ থেকে নেমে আসলো।
ড্রয়িংরুমে পুস্পিতার লাগেজটা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম।মাস পাঁচেক হলো আমার বাবা মারা গেছেন।উনার ব্যবসা এখন আমার বড় ভাই দেখে। ভাইয়া বিবাহিত।ভাইয়া ফ্যামিলি নিয়ে নিচ তলায় থাকে।আর আমি দোতলাতে একাই থাকি।বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর আমি বাসায় এসে উঠেছি।এই বাসার ছেলে হলেও আমার কারোর সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলোনা।মা মারা যাওয়ার পরে একেবারেই বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।মা বেঁচে থাকাকালীনও আমি বাসায় খুব একটা আসতাম না।বড় ছেলেকে সামলাতে সামলাতে কখন যে ছোট ছেলে অনেকটা পিছিয়ে গেছে সেটা তারা খেয়ালই করেনি।আর যখন খেয়াল করেছে তখন পারিবারিক বন্ধন থেকে একেবারেই ছিটকে পরেছিলাম।পরে যখন বাবা মারা গেলো তখন ভাইয়া নিজে গিয়ে আমাকে নিজের বাসার দায়িত্ব নিতে বলে।আর ব্যবসায় থেকে যা প্রফিট আসে মাস শেষে সেইটার অর্ধেক আমার এক্যাউণ্টে জমা করে দেয়।অনার্স কম্পলিট করেছি মাস দুয়েক হলো।
বুয়া এসে রান্না আর কাপড় গুলা কেঁচে দিয়ে যায়।বই পড়া, মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে যাওয়া,পরিচিত কারোর সাথে দেখা হলে ধোয়া ওঠা গরম চায়ের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা সব মিলিয়ে এভাবেই উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলছিলো আমার দৈনন্দিন জীবন…
বাথরুম থেকে চেঞ্জ করে ঘাড়ে টাওয়েলটা নিয়ে আমি বের হলাম।
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে লাগেজটার দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে জমা হওয়া রহস্য ভেদ করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছি।
পুষ্পিতা এইখানে? কিন্তু কেন??
আমি যখন আব্দুল চাচার মেসে থাকতাম মেসের সামনের বাসাটাতে পুষ্পিতার মামার বাসা ছিলো।পুস্পিতার বাবা নেই।বছর দুয়েক হলো মামার বাসায় এসে উঠেছে।বাবার পেনশন দিয়ে কোনরকমে দিন পার হয়ে গেলেও মামা নিজে থেকেই মা আর মেয়ের দায়িত্ব নেয়।
আব্দুল চাচার মেসে উঠেছি আজ চারদিন হলো।একদিন সকালে কালাম চাচার দোকানে গিয়ে বসেছিলাম।কালাম চাচার মুদির দোকান কিন্তু দুধ চা টা যা বানাই পুরাই অস্থির।এই সময়টাতে তেমন কেউ ঘুম থেকেই ওঠেনা।দোকান একেবারেই ফাঁকা। মাঝে মাঝে কেউ আসছে তাদের প্রয়োজনীয় যা লাগবে নিয়েই চলে যাচ্ছে।আমি চাচাকে এক কাপ চা দিতে আর সাথে একটা বিস্কিট দিতে বললাম।নিউজপেপারটা হাতে নিয়ে একটু উল্টে পাল্টে দেখছিলাম।তখনি একটা মেয়ের কন্ঠে শুনে নিউজপেপারটা মুখের সামনে থেকে একটু নিচু করে মেয়েটার দিকে তাকালাম।মেয়েটা আমার দিকে একবার তাকালো তারপর দোকানের বেঞ্চটাতে বসতে বসতে কালাম চাচাকে বললো আমাকে এককাপ চা দিয়েন তো।ফুল কাপ দিবেন। চাচা একটু হাসলো। তারপর আমাকে আমার চা আর বিস্কিটটা দিয়ে মেয়েটার জন্য চা বানাতে লাগলো।
আমি নিউজপেপারটা আমার বাম পাশে রেখে চায়ের মধ্যে বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছিলাম।
মেয়েটা বলে উঠলো
-এই যে মি. নিউজপেপারটা পাস করুন।
-জ্বীইই..
-বললাম নিউজ পেপারটা পাস করুন।কানে শুনেন না নাকি।
আমি নিউজ পেপারটা মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলাম নিউজ পেপারটা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো।
তারপর কালাম চাচা কে দেখলাম চায়ের কাপের মধ্যে একটা চামচ দিয়ে ওর পাশে চায়ের কাপটা রাখতে।চায়ের কাপের মধ্যে চামচ দেয়া দেখে আমার বেশ কৌতূহল হলো।আমি নিজের চা খাওয়া বাদ দিয়ে মেয়েটার চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মেয়েটা চামচে একটু করে চা নিয়ে ফুঁ দিচ্ছে আর খাচ্ছে।ব্যাপারটা আমার খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো।নিজের চা খাওয়া বাদ দিয়ে আমি বেশ মজা নিয়ে ব্যাপারটা আড় চোখে দেখছিলাম।ইতিমধ্যে মেয়েটার চা খাওয়া শেষ।কালাম চাচা কে চায়ের টাকাটা দেয়া শেষ করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো এভাবে আড় চোখে তাকিয়ে দেখাটা কিন্ত খুব অন্যায়।এইসব বদ অভ্যাস বাদ দেয়াই শ্রেয়।কথাটা শুনে আমি খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। কথাটা বলার পরে মেয়েটা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে গেলো..
আমি মেয়েটার গমন পথের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চায়ের বিলটা দিয়ে মেসে ফিরে গেলাম…
ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে আমি আর রাফি একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম।উদ্দেশ্য জমিয়ে রাফির পকেট ফাকা করা।সুযোগ পেলে রাফি নিজেও আমার পকেট ফাকা করে নেয়।কিন্তু আজ সুযোগটা আমার।খাবার অর্ডার করা শেষে আমরা চুপচাপ বসে ছিলাম।হঠাৎ করেই দেখলাম আমাদের পাশের একদম শেষের টেবিলের আগের টেবিলে যে মেয়েটা বসে ছিলো উঠে দাঁড়ালো এবং সামনে থাকা ছেলেটাকে কিকি জানি বললো।স্পষ্ট শুনতে পেলাম না।মেয়েটার চেহারাটা দেখতে পারছিলাম না।মেয়েটার সামনে থাকা ছেলেটা কেমন একটা দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।মুহূর্তের মধ্যেই মেয়েটা ছেলেটাকে থাপ্পড় মেরে রাগি একটা লুক নিয়ে আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেলো।মেয়েটাকে দেখেই চিনে ফেললাম।চায়ের দোকানে দেখা সেই মেয়েটা।মেয়েটা বলার কারণ আমি তখনো তার নাম জানতাম না।পরে জেনেছি যে ওর নাম পুষ্পিতা।
বেশ কিছুদিন পরেই আবার দেখা হলো আমাদের।ও বাসা থেকে বের হচ্ছিলো আর আমিও মার্কেটে যাচ্ছিলাম।ওকে দেখে একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিলাম।পরিবর্তে ও নিজেও হাসলো।
আমরা পাশাপাশি হাটছিলাম..
"মি. আড়চোখা আপনি??
"আমার নাম মি. আড়চোখা না।
"তাহলে নাম কি?
"প্রণব রায়হান।
"বাহ বেশ তো।আনকমন নেইম।
আমি ধন্যবাদ দিয়ে একটু জড়তা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
"আপনার নাম টা?
"পুষ্পিতা রহমান।
"আপনার নামটাও সুন্দর।আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ভাবছিলাম।
এবারে পুষ্পিতা আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখলো।তারপর একটু গম্ভীর ভাবে বললো-
"কি জিজ্ঞেস করবেন? আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা?
"না তো।
পুষ্পিতা মনে হয় আমার এরকম উত্তর শুনে বেশ অবাক আর আহত হলো।সুন্দরি মেয়েদের এই এক সমস্যা।আগেই নিজেকে নিয়ে আকাশ পাতাল ভেবে বসে।ওর চেহারাটা দেখে এরকমই মনে হচ্ছিলো আমার।
"তাহলে কি বলবেন?
"আসলে জানতে চাইছিলাম সেইদিন রেস্টুরেন্টে ছেলেটাকে ওইভাবে থাপ্পড় কেন মারলেন?যদিও পার্সোনাল প্রশ্ন তবুও...
"হুম পার্সোনালই বটে।
অপ্রস্তুত ভাবে হাসলো পুষ্পিতা।বুঝলাম বলতে চাচ্ছেনা।
"আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো??
পুষ্পিতা একটু হেসে বললো
"আজকে রেখে দিন।আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে।
কথাটা বলেই রিক্সা ঠিক করে চলে গেলো।আর আমি আমার কাজে চলে গেলাম...
0 Comments