ভালবেসে কাছে না পাওয়ার বেদনা
ভালবেসে কাছে না পাওয়ার বেদনা পৃথিবীটা গােল। এখানে কখন যে কার সাথে কিভাবে দেখা হয়ে যায় বলা খুব মুশকিল। মুন্নি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। অনেকদিন হল আমাদের বন্ধুত্ব।
নিয়মিত চ্যটিং আর মাঝে মাঝে মােবাইলে কথা বলার মাধ্যমে আমাদের এই বন্ধুত্বটা
আমরা ঝালাই করে নেই। অনেক রিকোয়েষ্টের পর গত কিছু দিন পূর্বে ওর কয়েকটি ফটো ও পাঠিয়েছিল ফলে আমিও আমার ফটো দিয়েছিলাম ওকে।
আসলে বেশ কয়েক বছরের এই বন্ধুত্বের ফাকে কখন যে ওকে ভালবেসে ফলেছিলাম তা আমি নিজেও বলতে পারবােনা। অনেক দিন ওকে কথাটা বলব বলব করেও
আর বলতে পারিনি ভয়ে। যদি রাগ করে আমার সাথে
বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও ল্ট করে দেয় ও।
এই ভয়ে কখনােই বলতে পারিনি ওকে মনের কথাটা।
অত:পর সিদ্ধান্ত নিলাম যা বলার সামনাসামনিই বলব
ওকে। তখন যা হবার হবে। তাই একদির দেখা করতে
বললাম ওকে।কিন্তু ও কিছুতেই রাজি হল না। বল্ল আরও
কিছু দিন পর আমরা দেখা করব।
কি আর করা, দেখা করা হল না। কিন্তু কি আশ্চর্য গত
কিছুদিন পূর্বে আমি পাবলিক গাড়িতে চড়ে কোথাও
যাচ্ছিলাম আর বসে বসে ওর সাথে চ্যাটিং করছিলাম।
আমি ওকে জিগ্যেস করলাম - তুমি কোথায়? কি করছাে?
বাসায় টিভি দেখছি। তুমি কি কর?
- আমি তাে বাসায় শুয়ে রয়েছি ঠিক যখন আমাদের
চ্যটিং এই পর্যায়ে এমন সময় হঠাৎ আমার পাশের সিটে
একটি মেয়ে এসে বসল। স্বভাব অনুযায়ী মােবাইল থেকে
দৃষ্টি ঘুড়িয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়েই আমি যেন আকাশ
থেকে পড়লাম। মেয়েটি তখনও মােবাইলে কারও সাথে
চ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। এই মেয়েটির চেহারা মুন্নির পাঠানাে ফটোর
সাথে পুরােপুরি মিল। কিন্তু ও তাে এখন বাসায় বসে টিভি
দেখছে বল্ল আমায়। ততক্ষনে মেয়েটিও আমার দিকে
বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে। কারও মুখেই যেন কোন ভাষা
নেই এমন এক অবস্থায় আমাদের প্রথম দেখাটা হয়ে গেল।
দুজন একসাথেই বলে উঠলাম
- তুমি.........!!!
-
- তুমি.........!!!
-তুমি না বাসায় টিভি দেখছাে?
আর তুমি না বলে বাসায় শুয়ে রয়েছাে?
কি আশ্চর্য প্রথম দেখাতেই লেগে গেল তুমুল ঝগড়া।
আমি তখন মুখ ফসকে বলে ফেল্লাম, প্রথম দেখাতেই
এভাবে ঝগড়া করে
তােমার মতাে মেয়ে আমি আমার জীবনেও দেখিনি।
আগুনে যেন ঘি ঢালার কাজ করল কথাটা।
- জীবনে কয়টা মেয়ের সাথে দেখা করেছাে শুনি?
- একটাও না
- না.........করেছাে তাে, কারণ তােমার তাে অভিজ্ঞতার
শেষ নেই।
- আরে বল্লাম তাে আমি করও সাথে দেখা করিনি।
কোন কাজ হল না। আমার সাথে ঝগড়া করে অগ্নিমূর্তি
ধারন করেছেন উনি এখন।
- আজকের পর আমার সাথে কোন ধরনের কোন
যােগাযােগ রাখার চেষ্টা করবা না।
যথা আজ্ঞা
হতভম্ব হয়ে বাসের সিটে বসে রইলাম।
আমি জানি মুন্নি আমার সাথে আবারও যােগাযােগ করবে।
কারন ওর চোখে আমি আমার জন্যে ভালবাসা দেথেছি।
আমাকে ভাল না বাসলে ও আমার সাথে এভাবে ঝগড়া
করত না। যাই হােক শুরু হল আমার অপেক্ষার প্রহর।
ফেসবুকেও দেখি এখন আর আসে না।
কল দেই কিন্তু মােবাইল বন্ধ পাই। বুঝতে পারছি না কিছু
কি হয়ে গেল।
এভাবে চলে গেল প্রায় কয়েক মাস। দিনে দিনে আমার
অস্থিরতা বারছেই। অপেক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয় না।
ফেসবুকে অনেক কে জিজ্ঞেস করলাম ওর বাসার ঠিকানা
কেউ জানে কিনা কিন্তু কেউ জানেনা। কি যে করব কিছুই
বুঝতে পারছিলাম না।
জীবনে একটা মেয়েকেই ভালবেসেছি। আর কোন
মেয়েকে ভালবাসব না বলে পন করেছি। কিন্তু যার জন্য
এই সবকিছু তাকেই যদি জীবনে না পাই তাহলে কার
জন্যে আমার এই ভালবাসা? দিনে দিনে আমার সাস্থ
খারাপ হতে লাগল। খাওয়া-দাওয়া করতে পারছিলাম না।
মােটেও আর। প্রায় মাস ছয়েক পর হঠাৎ দেখি মুন্নির নামে
আমার কাছে একটি চিঠি আসল যার শুরুতেই মুন্নির হাসি
হাসি একটি ফটো দেওয়া।
দেখা মাত্রই খুশি হয়ে উঠলাম।
পড়া আড়ম্ভ করলাম
প্রিয় সাকিব,
আশা করি ভালই আছ। আমাকে ছাড়া শুখে আছ।
দিন যায় রাত আসে আবার রাত যায় দিন আসে।
এভাবেই দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়ে যায়।
প্রতিদিনকার সুর্যের নতুন আলাে দেখে মানুষ নতুন ভাবে
বাঁচতে শিখে।
কিন্তু আমি পারিনা। কারন আমি যে ক্যন্সার রােগী।
ডাক্তার আমাকে বলেছে আমি আর বেশি দিন বাঁচবােনা।
জানাে, এতে আমার কোন কষ্ট নাই কিন্তু কষ্টটা লাগে
যখন আমার বাবা-মার চেহারার দিকে তাকাই।
কষ্টে তখন আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে তখন।
আমি সব সময় চিন্তা করেছি আমাকে ছাড়া আমার বাবা
মাও একদিন বাচতে শিখে যাবে কারন তাদের আমি
ছাড়াও আরও সন্তান আছে কিন্তু যে মানুষটা আমাকে
ভালবেসে আমাকে জীবন সঙ্গী বানানাের জন্যে অপেক্ষায়
আছে সেই মানুষটার কি হবে?
সে তাে পুরােই একা হয়ে যাবে।
তাই কখনােই আমার ভালবাসাটা প্রকাশ করিনি।
পাছে যদি সেই মানুষটা কষ্ট পায় আমার জন্য।
কিন্তু আমি যানি আমাকে ছাড়াই সেই মানুষটা আজ বেঁচে
থাকতে শিখে গেছে।
আজ আর তার ততােটা কষ্ট হবে না যতােটা কষ্ট হত
আরও আগে জানালে।
আজ আমি তােমার কাছে কিছুই লুকাব না
কারন আমি জানি তােমার কাছে যখন এই চিঠিটা যাবে
তখন আমি আর এই পৃথিবীতে থাকবােনা। তাই আজ
আমি তােমার কাছে সব সত্য বলব। কিছুই লুকাবাে না।
সত্যিই আমি তােমাকে অনেক ভালবাসি।
যা কখনােই আমি তােমাকে বুঝাতে পারিনি বা চাইনি।
আমি চেয়েছিলাম তুমি সুখে থাক তাই তােমাকে
ভালবাসার কথা বলে তােমার মনে আশার আলাে জাগিয়ে
তােমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।
ভালবাসা অন্তরে। অন্তর দিয়ে ভালবাসলে সেই ভালবাসা
সারাজীবন থেকে যায়।
কষ্ট পেওনা প্লিজ।আমি সেই আকাশের তারা হয়ে
সবসময় তােমাকে দেখব।
আর রাত জেগে আমরা গল্প করব।
0 Comments